অবৈধ বালু নিলাম বাণিজ্যে মেতেছেন লামার ইউএনও মঈন উদ্দিন

মোহাম্মদ ইলিয়াছ
 ছবি:
ছবি:

বছর খানেক আগেও অবৈধ বালুর উত্তোলন ও বালুর ব্যবসা সীমিত আকারে ছিল বান্দরবানের লামা উপজেলায়। কিন্তু এখন রমরমা ব্যবসায় পরিণত হয়েছে উপজেলাজুড়ে। পুরো উপজেলা মিলে হাতেগুনা মাত্র ১০-১৫ টা অবৈধ বালুর উত্তোলনের পয়েন্ট থাকলেও এখন সেটি বেড়ে হয়েছে প্রায় শতাধিক। এর কারন হচ্ছে লামা উপজেলার ইউএনও জব্দ করে নিলামের মাধ্যমে বৈধতা দিচ্ছে এই অবৈধ বালুগুলো। ফলে দিন দিন বাড়ছে বালু উত্তোলন।

অভিযোগ উঠেছে, এই অবৈধ বালু জব্দ করে নিলামের নামে রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো মঈন উদ্দিন এবং হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধ বালুগুলো প্রথমে জব্দ করা হয়। এর পরে একটি মূল্য ধরে নিলামে বিক্রয় করা হয়।  কিন্তু অভিযোগ উঠেছে কোটি লক্ষ টাকার বালু নিলাম দেয় মাত্র ২ লক্ষ টাকায় যেখানে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা নিলাম দেওয়া যেতো। সুত্রে জানা যায়, এই নিলামে ইউএনও মাঈন উদ্দিন মোটা অংকের একটি উৎকোচ লেনদেন করে। তাছাড়াও এই বালুর সরকারি নিলাম দেওয়া হয় যারা বালু উত্তোলন করেছে তাদেরকে বা তাদের সিন্ডিকেটের কাছে। 

এরকমই একটি ঘটনা ঘটছে উপজেলার আজিজজনগর ইউনিয়নের পুর্বচাম্বি ৯ নং ওয়ার্ডের মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি বালুর পয়েন্টে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীরা জানায়, এই পয়েন্টে প্রায় কোটি টাকারও বেশি মূল্যের বালু জব্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ইউএনও গোপন নিলামে এই কোটি টাকার বালু মাত্র ২ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে এবং বালু নিয়ে যাওয়ার জন্য ১ মাস সময় সীমা বেধে দেয়। 

স্থানীয়রা জানায়, একমাস ধরে দিনে রাতে ডেম্পার গাড়ি (পিকআপ) দিয়ে প্রায় ২ হাজার গাড়ি বালু নিয়ে যাওয়ার পরও আরো দুই হাজার গাড়ি বালু থেকে যায় ওই পয়েন্টে। পরে এলাকাবাসী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে দেখে ইউএনও ঐ বালু তড়িগড়ি করে আবারও নতুন করে নিলাম দিয়ে ১২ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করে পার পেয়ে যায়। 

নাম প্রকাশ না করা শর্তে আরেক ব্যক্তি বলেন, শুধু বালু নিলাম বাণিজ্য করে পুরো লামা উপজেলা থেকে বিগত ১ বছরে কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নিয়েছে ইউএনও। এরকম ঘটনা উপজেলা জুড়ে আরো অসংখ্য রয়েছে যা মানুষ ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না।

আরো একটি বিষয় হচ্ছে নিলামকৃত বালু নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন করে উত্তোলন করে আরো লক্ষ লক্ষ ঘনফুট বালু একই নিলামে দেখিয়ে নিয়ে পাচার করা হয় যা কেউ টেরও পায়না। ফলে এই নিলামকৃত বালু ৬ মাস ধরে বিক্রয় করলেও শেষ হয় না। 

এলাকাবাসীরা জানায়, মূলত বালু জব্দ-নিলাম এগুলো সব নাটকের অংশ। নিলাম দেখিয়ে ইউএনও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি বালুর মহলগুলোকে বৈধতা দিচ্ছে বলেও জানায় এলাকাবাসীরা।

সরই ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন, বালু উত্তোলনে পুলিশের টাকা পুলিশ নেয় আর ইউএনওর টাকা ইউএনও নেয়। বালু উত্তোলনের কারনে রাস্তা ঘাট খাল বিল সব খানাখন্দে ভরে গেছে। প্রশাসন নিজে জড়িত হওয়াতে অভিযোগ কোথায় দিবে তাও বুঝতে পারছে না এলাকাবাসী।

তারা আরোও বলেন, পুরা সরই ইউনিয়নে অবৈধ বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে কথিত যুবদল নেতা সেলিম ও তার বাবা আহমদ মেম্বার। তারা বাপ-ছেলে মিলে ইউএনও অফিসকে ম্যানেজ করে। তাদের বাহিরে যারা যাবে তাদেরকে ইউএনওর মাধ্যে বালুগুলো জব্দ করানো হয়। পরে বাপ-ছেলে মিলে এগুলো নিলামে ক্রয় করে নেয়। যদিও সেলিশ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তবে নিলামে বালু নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমি অবৈধ বালুর ব্যবসা করিনা তবে নিলামে ক্রয় করে নিই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, আমাদের ইউনিয়ন থেকেও একই নিয়মে বালু উত্তোলনকারীদের থেকে টাকা নিয়ে যায় ইউএনও।

এ ব্যাপারে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মঈন উদ্দিন তার ব্যাপারে আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন নিলাম বাণিজ্য করিনি। স্কুলের পাশের বালুর পয়েন্টেটা ডিসি স্যারের সাথে কথা বলে ইনস্ট্যান্ট নিলাম দেওয়া হয়েছে। এটা নিয়ে অভিযোগ করেছে ডিসি স্যারের কাছে। মানুষ এভাবে কথা বলতেছে কি বলবো ভাই। 

বিষয়:

এলাকার খবর

সম্পর্কিত