গ্রুপিং দ্বন্দে ভরা বান্দরবান জেলা বিএনপি। দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রুপিং দ্বন্দ চলে আসছে। এটি যেনো কোনভাবেই শেষ হবার নয়।
বিএনপির অসংখ্য দলীয় নেতা কর্মী থাকা স্বত্ত্বেও নেতৃত্ব নিয়ে গ্রুপিং দ্বন্দের কারনে এই আসন থেকে টানা বিগত সাত বার বিএনপি জয়ের মুখ দেখেনি।
গ্রুপিং এর সুযোগ নিয়ে বার বার সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী বীর বাহাদুরের জয়ী হয়েছে। তারপরও টনক নড়ে না জেলা বিএনপি এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির। আগে ছিল জেরী-ম্যামাচিং গ্রুপিং দ্বন্দ। বর্তমানে ম্যামাচিং অসুস্থ। তাই এখন চলছে জেরী-জাবেদ গ্রুপিং দ্বন্দ। এভাবেই চলছে বান্দরবান জেলা বিএনপির কার্যক্রম।
এই গ্রুপিং দ্বন্দ জেলা-উপজেলা পর্যায় থেকে একেবারে ইউনিয়ন পর্যন্ত পৌঁছে গেছে এবং দুটি গ্রুপই যুগ যুগ ধরে আলাদা আলাদা দলীয় প্রোগ্রামগুলো পালন করছে।
তাছাড়াও কোন এলাকার নেতাকর্মীদের একগ্রুপ দলীয় প্রোগ্রাম আয়োজন করলে, ওই এলাকায় অন্যগ্রুপের নেতা কর্মীরা খেলার আয়োজন করে। আবার একগ্রুপের বিরুদ্ধে অন্যগ্রুপ বিভিন্ন মামলা হামলা-হামলা, পেইজবুকে আক্রমণাত্বক পোস্ট দেয়াসহ এমনকি বিভিন্ন সময় সংঘর্ষেও লিপ্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
এরকম কয়েকটি ঘটনা উদারহনের মধ্যে একটি হচ্ছে ১ সেপ্টেম্বর বান্দরবানে বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন অনুষ্ঠানে কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শহরের মুক্তমঞ্চের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার পর ২৪ সেপ্টেম্বর নাইক্ষংছড়িতে ঘটে যায় জেরী আর জাবেদ গ্রুপের মধ্যে আরেক দফা মারামারি। উপজেলা বিএনপির সাধারন কর্মীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমেদ তথা জেরী গ্রুপের সাথে জাবেদ গ্রুপের দ্বন্দ বিদ্যামান রয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জাবেদ গ্রুপের ছেলেরা জেরী গ্রুপের তোফাইলের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানহানিকর পোস্ট দিতে থাকে। পরে তোফাইল ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধ সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করে। আবার পরে জাবেদ গ্রুপের ছেলেপুলেরা ক্ষিপ্ত হয়ে মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার চেস্টা করলে তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয় এবং অনেকেই আহত হয়। এলাকাবাসীরা জানায়, মূলত এগুলো দীর্ঘ দিনের গ্রুপিং এর কারনেই হচ্ছে।
সর্বশেষ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গা পূজার সময়ও দেখা যায় বান্দরবানের প্রত্যেকটি এলাকায় জেরী গ্রুপ আর জাবেদ গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পূজার প্রোগ্রামে উপস্থিত হতে। ফলে পূজা উৎযাপন কমিটিরও আলাদা আলাদা ভাবে আপ্যায়ন করতে হয়েছে যা তাদের জন্য ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষও বটে।
ঠিক একইভাবে বান্দরবানের লামা ও আলীকদমসহ সাত উপজেলায় সমানতালে এই গ্রুপিং এবং দ্বন্দ বিদ্যামান রয়েছে এবং তাদের মধ্যে সব সময় কারনে অকারনে দ্বন্দ লেগেই থাকে।
এদিকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অতিষ্ট হয়ে উঠেছে এই গ্রুপিং দ্বন্দ দেখতে দেখতে। তাদের প্রশ্ন এই গ্রুপিং দ্বন্দের শেষ কোথায় এবং তারা চায় এই গ্রুপিং দ্বন্দের সুন্দর একটি সমাপ্তি।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে লামা উপজেলার বেশ কয়েকজন সাধারন কর্মীরা বলেন, এগ্রুপিং যদি চলমান থাকে সামনের সংসদ নির্বাচনে আসনটি বান্দরবান জেলা বিএনপির জন্য চরম হুমকী হয়ে দাঁড়াবে এবং এই বারে আওয়ামীলীগ না থাকা স্বত্বেও সংসদীয় আসনটি হাতছাড়া হয়ে যাবে।
গ্রুপিং দ্বন্দের বিষয়টি নিয়ে বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব জাবেদ রেজা বলেন, প্রকৃত পক্ষে আমি গ্রুপিং এর পক্ষে না তবে যারা করছে তাদেরকেও গ্রুপিং থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। আশা করছি দল নমিনেশন কনফার্ম করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। যদি নমিনেশন সাচিং প্রু জেরীকে দেয় তার পক্ষে কাজ করবো যদি আমাকে দেয় তাহলে আশা করছি তারাও আমার পক্ষে কাজ করবে।
বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাচিং প্রু জেরী বলেন, আপাতত এটা নিয়ে কোন কমেন্ট করতে চাইনা। দল থেকে বা নেত্রী যেটা সিদ্ধান্ত দেয় সে ভাবে কাজ করবো।